৮ জুন, ২০২২

এ.পি.জে. আবদুল কালামের জীবনী ও তার বিখ্যাত ১০ টি উক্তি- Biography of A. P. J. Abdul Kalam


ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে. আবদুল কালাম কে নিয়ে গল্প শুনেননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। তিনি ছিলেন ভারতের শীর্ষ বিজ্ঞানী প্রশাসক। বিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে ভারতে তার অবদান অসামান্য। তার হাত ধরেই সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন। ভারতের রকেট ও মিসাইল প্রযুক্তিতে তার অবদান সর্বাগ্রে। ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র প্রযুক্তি পূর্ণতা পেয়েছে তার হাত ধরেই এজন্য তাকে মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া বলে আখ্যায়িত করা হয়। আজকে চলুন আমরা এই বিখ্যাত মনিষীর জীবনী সংক্ষেপে জানি।      


 

জন্ম ও ছোটবেলা: আবুল পাকির জয়নুল-আবেদিন আবদুল কালাম তামিলনাড়ু রাজ্যের উপকূল সংলগ্ন রামেশ্বরমের দরিদ্র দম্পতি জয়নুল আবেদীন ও আশিয়াম্মার ঘরে জন্মগ্রহন করেন ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর। তামিলনাড়ুর একটি ছোট শহরে জন্ম তার। শহর ছোট হলেও বড় স্বপ্ন নিয়ে পৃথিবীর পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। রামেশ্বরমে তামিল মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া কালাম ছোটবেলা থেকেই চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়ে ওঠেন। দারিদ্র্য  বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার পড়াশোনায়। লেখাপড়ার খরচ সংগ্রহ করতে কালাম অনেক ছোটখাটো কাজ করেছেন জীবনে। পরিবারকে সাহায্য করতে তিনি ছোটবেলায় খবরের কাগজ ও বিক্রি করেছে।       


লেখাপড়া: ছোটবেলা থেকেই অংক কষতে দারুন ভালোবাসতেন এ পি জে আবদুল কালাম। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে একের পর এক অংক কষে যেতেন। এই কাজে তার কোনো  ক্লান্তি ছিল না। তিনি একজন মধ্যমমানের ছাত্র ছিলেন কিন্তু  জানার প্রবল ইচ্ছা পরবর্তীতে তাকে পাল্টে দেয়। রামনাথপুরম মেট্রিকুলেশন বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা শেষ করে ১৯৫৪ খৃস্টাব্দের কালাম মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিরুচিরাপল্লীতে অবস্থিত সেন্ট জোসেফ  কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হন।  ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন। এ সময় তার পঠন-পাঠনের অগ্রগতিতে অখুশি ডিন তিন দিনের মধ্যে প্রকল্প শেষ না করলে বৃত্তি বন্ধ করে দেয়ার ভয় দেখান। কিন্ত তিনি নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্ন করেন। 


কর্মজীবন: মাত্র ৮ টি পদের জন্য পরীক্ষার নবম স্থান লাভ করায় তার ভারতীয় বিমান বাহিনীতে যুদ্ধ বিমানের চালক হিসেবে যোগদানের স্বপ্ন খুব অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়। ১৯৬০ সালে বিজ্ঞানী হিসেবে কালাম ডিআরডিও ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন এর সঙ্গে যুক্ত হন। ক্যারেয়ারের একেবারে প্রথম দিকে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য একটি ছোট হেলিকপ্টার ডিজাইন করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ডিআরডিও তে একটি রকেট প্রজেক্টে কাজ  শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে ভারতের মহাকাশ গবেষনায় স্যটেলাইট ডিরেক্টর পদে নিয়োগ লাভ কারেন।  তার নেতৃত্বে ১৯৮০ সালে ভারত প্রথম স্যাটেলাইট রোহিনী মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেন। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে গবেষণার কারণে তাকে ভারতের মিসাইল ম্যান হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। তিনি ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত ভারতের পোকরান-২ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ব্যাপারে ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।


রাষ্ট্রপতি আবদুল কালাম:   ২০০২ সালে ভারতীয় জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থনে তিনি ভারতের একাদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী পাঁচ বছর এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে যেমন প্রশংসায় ভেসেছেন তেমনি কিছু কিছু ক্ষত্রে হয়েছেন সমালোচিত। বিশেষ করে ২০ জনের প্রানভিক্ষার ব্যাপারে তার নির্বিকার ভূমিকা অনেকে ভালোভাবে নেননি।


পুরস্কার ও পদক: বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও পদক লাভ কারেন। ভারত সরকার এ পি জে আবদুল কালাম কে ১৯৮১ সালে পদ্মভূষণ ১৯৯০ সালে পদ্মবিভূষণ ও ১৯৯৭ সালে ভারতরত্ন উপাধি দেন। এ ছাড়াও জাতীয় স্বার্থ ও মানবকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি আরো অনেক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পদক সম্মানে ভূষিত হন।  


কেখক আবদুল কালাম: তিনি একজন অত্যন্ত মেধাবী ও সংবেদনশীল লেখক ও ছিলেন। তিনি বেশকিছু প্রণোদনামূলক ও প্রভাবশালী বই লিখেছেন। এর মধ্যে 'India-2020' সর্বাধিক পঠিত এবং প্রশংসিত। এই বইয়ে তিনি লিখেছেন ২০২০ সালের মধ্যে ইন্ডিয়াকে সুপার পাওয়ার হতে হলে কি ধরনের পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে যেতে হবে। Ignited Minds, Mission India, Inspiring Thoughts, The Luminous Sparks ও Wings of Fire তার লেখা বই গুলোর মধ্যে অন্যতম।


তরুণদে  প্রণদনায় তার ভূমিকা: ২০১১ সালে তিনি তরুণদের নিয়ে 'What Can I Give Movement' 2011 শীর্ষক দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে লেকচার দিয়ে বেড়িয়েছেন। তরুণ শিক্ষার্থীদের খুব ভালবাসতেন তিনি। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গ দিতেন। সেইসাথে কিভাবে পথ চলতে হয় স্বপ্ন দেখতে হয় স্বপ্ন পূরণ করতে হয় তা শিখিয়ে যেতেন তাদের। প্রায় ৮০ লাখেরও বেশি তরুণের সঙ্গে তিনি মতবিনিময়  করেছেন বলে জানিয়েছিলেন এক অনুষ্ঠানে।


পারস্যের কবি জালাল উদ্দিন রুমির একটি কবিতা আবদুল কালামের হৃদয়ে স্বপ্ন দিয়েছিল। সে কবিতাটি ঢাকায় এসে তরুণদের আবৃত্তি করে শোনান তিনি:

" আমি সম্ভাবনা নিয়ে জন্মেছি। আমি জন্মেছি মঙ্গল আর বিশ্বাস নিয়ে। আমি এসেছি স্বপ্ন নিয়ে। মহৎ লক্ষ্য নিয়েই আমার জন্ম। হামাগুড়ির  জীবন আমার জন্য নয়, কারণ আমি ডানা নিয়ে এসেছি। আমি উড়বো, উড়ব, আমি উড়বই।"


মৃত্যু: এই মহান মানুষটি ২০১৫ সালের ২৭ ই জুলাই মেঘালয়ের শিলং শহরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানে 'বসবাসযোগ্য পৃথিবী' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। 


এ.পি.জে. আবদুল কালামের বিখ্যাত ১০ টি উক্তি

  1. "একটি ভাল বই একশ জন ভাল বন্ধুর সমান, কিন্তু মাত্র একজন ভাল বন্ধু গোটা লাইব্রেরির সমান"

  2. ''ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্ন আসলে স্বপ্ন নয়, যা তোমায় ঘুমতো দেয় না স্বপ্ন আসলে সেটা।''

  3. ''স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্নই চিন্তার রূপ পায়, আর সেই চিন্তা কাজে পরিণত হয়।''

  4. ''যদি তুমি সূর্যের মত উজ্জ্বল হতে চাও, তাহলে প্রথমে তোমায় সূর্যের মতোই জ্বলে উঠতে হবে।''

  5. ''যদি তুমি পরাজিত হও, তাহলে হাল ছেড়ো না, কারণ সেটাই তোমার শেখার প্রথম পদক্ষপ।''

  6. '' আমাদের কখনও হাল ছাড়া উচিত নয়। আমরা কখনওই সমস্যাকে আমাদের হারানোর অনুমতি দিতে পারি না।''

  7. ''আমাদের জেতার ইচ্ছা যদি দৃঢ় হয়, তবে কখনওই পরজয় আমাদেরকে ছাপিয়ে যেতে পারে না।''

  8. ''আমাদের সবার দক্ষতা সমান নয় ঠিকই, তবে আমাদের সবার কাছেই সেই দক্ষতাকে আরও বাড়ানোর সমান সুযোগ রয়েছে।''

  9. '' কাউকে হারিয়ে দেওয়া তো খুব সহজ, শক্ত হল কাউকে জয় করা।''

  10. ''আমার কাছে মানুষ দুধরণের, প্রথমত নবীশ দ্বিতীয়ত অভিজ্ঞ।''


শেয়ার করুন

0 comments: